সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৬ টি কিডনি ডায়ালাইসিস মেশিন নষ্ট – নেই বিশেষজ্ঞ


Desk News প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪, ৬:৩৯ পূর্বাহ্ন /
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৬ টি কিডনি  ডায়ালাইসিস মেশিন নষ্ট – নেই বিশেষজ্ঞ

জিয়াউল ইসলাম জিয়া :
সাতক্ষীরা জেলার একমাত্র
সরকারী খরচে কিডনি ডায়ালাইসিস করা হয় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ২০১৫ সাল থেকে কিডনি রোগীরা খুব কম খরচে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে কিডনি ডায়ালাইসিস করেন। এখানে মাত্র ৪০০ টাকা দিয়ে কিডনি ডায়ালাইসিস করাতে পারেন রোগীরা। যা বেসরকারীভাবে করলে কমপক্ষে ৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়।

কিন্ত ৭ থেকে ৮ মাস যাবত সাতক্ষীরার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৬টি কিডনি ডায়ালাইসিস মেশিন নষ্ট হয়ে আছে। যে‘কটা সচল রয়েছে তাতে সিরিয়াল পেতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন কিডনি রোগিরা।

এতে করে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুর-দুরন্ত থেকে আসা কিডনি রোগীরা ডায়ালাইসিস করতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন। তাছাড়া এখানে নেই কোনো কিডনি রোগ বিষেশজ্ঞ চিকিসক।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফিডটি ফলো করুন
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পক্ষ থেকে ৫৫ টি নতুন কিডনি ডায়ালাইসিস মেশিন ও কিডনি বিষেশজ্ঞ চিকিৎসক বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করেও কোনো সুরাহা হয়নি বলে জানান হাসপাতাল পরিচালক।

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার নকিপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলাম জানান, তার বাবা রফিুকল ইসলাম (৬৫) এর কিডনি ডায়ালাইসিস করার জন্য সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে আসেন। কিন্ত এখানে এসে জানতে পারেন অধিকাংশ ডায়ালাইসিস মেশিন নষ্ট। যে কয়টা সচল আছে তাতে সিরিয়াল এক থেকে দেড় মাস লাগবে। ফলে তার বাবার জরুরী ভাবে কিডনি ডায়ালাইসিস করার জন্য খুলনায় রওয়ানা হন। শুধু সিরাজুল ইসলাম নয় প্রতিদিন সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অসংখ কিডনি রোগীরা ফিরে যাচ্ছেন ডায়ালাইসিস বা চিকিৎসা সেবা করতে না পেরে।

সাতক্ষীরার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডাক্তার কাজি আরিফ আহমেদ জানান, উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরাতে যে ভাবে কিডনি রোগী বাড়ছে সে তুলনায় চিকিৎসা ব্যবস্থা খুবই অপ্রতুল। তিনি বলেন, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর অদ্যবধি কোনো কিডনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেয়া হয়নি। জেলা ও জেলার বাইরে থেকে চিকিৎসা নিতে আসা কিডনি রোগীরা নানা বিড়ম্বনায় পড়েন। সাতক্ষীরার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কিছু রোগী কিডনি ডায়ালাইসিস সেবা পায়। তবে সেটি চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।

ডাক্তার কাজি আরিফ আহমেদ বলেন, সাতক্ষীরার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরী ভাবে কিডনি বিষেশজ্ঞ চিকিৎসক ও পর্যাপ্ত কিডনি ডায়ালাইসিস মেশিন স্থাপন করতে হবে।

তিনি বলেন, অন্য যে কোনো চিকিৎসার তুলনায় অত্যন্ত ব্যয়বহুল কিডনি রোগ চিকিৎসা খরচ। এ রোগে আক্রান্ত দুস্থ্য মানুষজন চিকিৎসা খরচ জোগাড় করতে পারেননা ঠিকমত। তিনি বলেন, সরকারী খরচে চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার সব নাগরিকের রয়েছে।

সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব এ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ জানান, জেলার ২৩ থেকে ২৪ লাখ মানুষের কিডনি বা অন্যান্য রোগের উন্নত চিকিৎসার একমাত্র মাধ্যম সরকারী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সাতক্ষীরা। এই হাসপাতালটি প্রতিষ্টিত হওয়ার পর থেকে নানা ধরনের সংটক যেন লেগেই আছে। বিষেশ করে কিডনি রোগ কোনো বিষেশজ্ঞ ডাক্তার নেই এখানে। ২০১৫ সালের পর থেকে কিডনি ডায়ালাইসিস কিছু সুবিধাটা পান কিডনি রোগীরা। কিন্ত এই হাসপাতালের ৬ টি ডায়ালাইসিস মেশিন নষ্ট থাকার কারণে সাধারণ কিডনি রোগীরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। তিনি দ্রুত নতুন ডায়ালাইসিস মেশিন স্থাপনের পাশাপাশি কিডনি রোগ বিষেশজ্ঞ চিকিৎসক দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান।

সাতক্ষীরার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ও তত্বাবোয়ক ডাক্তার মোঃ কুদরত-ই খোদা ৬টি ডায়ালাইসিস মেশিন নষ্ট থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ২০১৫ সালের দিকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জাপান ও জার্মান থেকে আমদানি করা ১৬ টি ডায়ালাইসিস মেশিন স্থাপন করা হয়। এসব মেশিনের বয়স ৮ থেকে ৯ বছর পেরিয়ে গেছে। তার পরও কখনো কখনো রিপেয়ার্রিং করে চালানো হয় কিডনি ডায়ালাইসিসের কাজ। কিন্ত গত ৭/৮ মাস ধরে ৬টি ডায়ালাইসিস মেশিন নষ্ট হয়ে আছে। এতে করে রোগীরা সময়মত ডায়ালাইসিস করতে পারছেন না। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে ফিরে যাচ্ছেন অনেক কিডনি রোগী। তাছাড়া জরুরী ভাবে অন্তত একজন কিডনি রোগ বিষেশজ্ঞ চিকিৎসক দরকার।

তিনি বলেন, ৫৫ টি নতুন ডায়ালাইসিস মেশিন ও কিডনি রোগ বিষেশজ্ঞ চিকিৎসক বরাদ্ধ চেয়ে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে পত্র করা হয়েছে। কিন্ত এখনো পর্যন্ত তার কোনো সুরাহা হয়নি বলে জানান তিনি।