গাজা উপত্যকার ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে লিবিয়ায় স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য। প্রতিবেদনে ট্রাম্প প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ পাঁচটি সূত্রের বরাতে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসনের বিনিময়ে লিবিয়াকে কয়েক বিলিয়ন ডলার মুক্ত করে দেওয়া হতে পারে, যা এক দশকের বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ফ্রিজ করা রয়েছে।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে লিবিয়ার নেতৃত্বের সঙ্গেও এই পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তবে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের একজন মুখপাত্র এই খবরকে ‘ভিত্তিহীন’ আখ্যা দিয়েছেন।
গাজা উপত্যকার জনগণকে লিবিয়ায় সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্দেশ্য পরিষ্কার। তাদের ধারণা, যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজাকে একটি নতুন পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা যেতে পারে, যেটিকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হবে।
তবে পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন সহজ নয়। এক মিলিয়ন ফিলিস্তিনিকে গাজা থেকে লিবিয়ায় স্থানান্তর করতে কয়েক হাজার ফ্লাইট অথবা ফেরি ট্রিপের প্রয়োজন হবে। গাজার নিজস্ব কোনো বিমানবন্দর নেই। ফলে মিশরের কায়রোকে ব্যবহার করে সড়কপথ বা জাহাজে লিবিয়ায় নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
এই পরিকল্পনার বিষয়ে ইসরায়েলকে অবহিত রাখা হয়েছে বলেও জানিয়েছে সূত্রগুলো। তবে ফিলিস্তিনের পক্ষ থেকে এই পরিকল্পনা নিয়ে ব্যাপক অসন্তোষ রয়েছে। হামাসের সিনিয়র কর্মকর্তা বাসেম নাইম বলেছেন, ‘ফিলিস্তিনিরা নিজেদের মাতৃভূমির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। তারা শেষ পর্যন্ত লড়বে, নিজেদের ভূমি, পরিবার, ভবিষ্যৎ রক্ষায় যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত।’
তাহলে কেন গাজাবাসীকে লিবিয়ায় সরাতে চান ট্রাম্প? এর পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ। গাজাকে পুনর্গঠন করে একটি পর্যটন অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছেন ট্রাম্প। এছাড়া, ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে দিয়ে ওই অঞ্চলকে আরও ‘নিরাপদ’ ও ‘ব্যবসাবান্ধব’ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য রয়েছে তার।
তবে এই পরিকল্পনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম বলেছেন, ‘এটি বহু মাত্রায় সমস্যাযুক্ত।’ আরব দেশগুলোও বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পরিকল্পনা শুধু গাজার জনগণের জন্যই নয়, পুরো মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকেই প্রভাবিত করতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :