রা‌শিয়ায় যু‌দ্ধে নিহত রাজবাড়ীর নজরুল, প‌রিবার জান‌ল ৭ মাস পর


Desk News প্রকাশের সময় : অক্টোবর ৯, ২০২৫, ৫:৪৩ অপরাহ্ন /
রা‌শিয়ায় যু‌দ্ধে নিহত রাজবাড়ীর নজরুল, প‌রিবার জান‌ল ৭ মাস পর

রাশিয়ায় গিয়ে ইউক্রেনের বিরু‌দ্ধে যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের নজরুল ইসলাম (৪৭)। দীর্ঘ সাত মাস ধরে নিখোঁজ থাকার পর বুধবার (৮ অক্টোবর) বিকেলে তার মৃত্যুর খবর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয় পরিবারকে। এ খবরে শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে পরিবারটি।

রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মারিয়া হক বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

পরিবারের সদস্যরা জানান, নজরুল ২০২০ সালে চাকরি থেকে অবসরে যান। এরপর থেকে তিনি বাড়িতে থাক‌তেন। কিছু দিন পর রাজবাড়ীর শ্রীপুর বাজারে মুদি ব্যবসা শুরু করেন। একসময় ব্যবসায় বড় লোকসান হওয়ায় আর্থিক সংকটে পড়েন। স্থানীয় দালাল ফরিদ হোসেন তা‌কে রাশিয়ায় শ‌পিং ম‌লে নিরাপত্তাকর্মীর চাকরির লোভ দেখান। এ বিষয়‌টি জানার পর নানা উপায়ে নজরুলকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন তার স্ত্রী আইরিন আক্তার। নজরুল তাকে বলেন, “রাশিয়ায় ভালো বেতন দেবে, সংসারের অবস্থা ভালো হবে।”

২০২৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নজরুল রাশিয়ার উদ্দেশে রওনা দেন। সেখানে পৌঁছা‌নোর পর এক মাসের সামরিক প্রশিক্ষণ ‌নি‌তে বাধ্য করা হয় তাকে। প্রশিক্ষণ শে‌ষে ইউক্রেনের বিরু‌দ্ধে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠা‌নো হয়। তখন নিয়‌মিত প‌রিবা‌রের সঙ্গে ভি‌ডিও কলে কথা বল‌তেন তিনি। স্ত্রী‌কে নজরুল বল‌তেন, “এখান থেকে ফি‌রে আসার আমার কোনো উপায় নেই। আমার ফোন বন্ধ পে‌লে ভাববা, মারা গে‌ছি।”

পরিবারের সঙ্গে নজরুলের সর্বশেষ কথা হয় ৩০ এপ্রিল। সেইদিন নজরুল তার স্ত্রীকে জানান, তিনি ব্যাংকে যাচ্ছেন টাকা পাঠাতে। কিছুক্ষণ পর ফের ফোন করে বলেন, “টাকা পাঠানো হলো না, দ্রুত যেতে হচ্ছে। যদি ফোন বন্ধ পাও, ধরে নিয়ো আমি আর বেঁচে নেই।” সেটিই ছিল তার শেষ কথা। এরপর থেকে নজরুলের কোনো খোঁজ মিলছিল না।

সাত মাস ধরে পরিবারের সদস্যরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করলেও কোনো তথ্য পাননি। বুধবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ফোনে জানানো হয়, নজরুল মারা গেছেন।

নিহতের স্ত্রী আইরিন আক্তার বলেন, “আমার স্বামী চাকরি থেকে অবসর নিয়ে বাড়িতে থাকতে। ব্যবসায় লোকসান হওয়ায় ফ‌রিদ দালা‌লের মাধ্যমে রা‌শিয়ায় যায়। আমি বারবার নিষেধ করেছিলাম। বলেছিলাম, সন্তানদের নিয়ে আমরা একসঙ্গে থাকব। সে বলল, রাশিয়ায় ভালো চাকরি আ‌ছে, নিরাপত্তা প্রহরীর কাজ। আমি চার মেয়েকে নিয়ে কীভাবে বাঁচব? আমার এখন একটাই চাওয়া, আমার স্বামীকে অন্তত আমার কাছে এনে দিক সরকার। শেষবার আমি একটু আমার স্বামীকে দেখতে চাই।”

নজরুল ইসলামের বড় ভাই রহিম বলেন, “ফরিদ নামের দালাল আমার ভাইকে প্রলুব্ধ করে রাশিয়ায় পাঠিয়েছে। আমরা বহু জায়গায় খোঁজ নিয়েছি। ফরিদ সব সময় বলত, ও বেঁচে আছে, নেটওয়ার্ক না থাকায় যোগাযোগ করতে পারছে না। এখন শুনলাম, আমার ভাই আর বেঁচে নেই। সরকার যেন তার লাশটা দেশে আনার ব্যবস্থা করে।”

অভিযুক্ত দালাল ফরিদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেন সাংবাদিকরা। তিনি বলেন, “আমি রাশিয়ায় পাঠাইনি নজরুলকে। তিনি গেছেন বিকন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস এজেন্সির মাধ্যমে। আমি শুধু যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছি। তিনি সব জেনে-শুনেই যান রাশিয়ান সেনাবাহিনীর লজিস্টিক হ্যান্ড হিসেবে। নো অব‌জেকশন সা‌র্টিফি‌কে‌টে স্বাক্ষরও ক‌রে গে‌ছেন। আমি গত রাতে শুনেছি, মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, নজরুল মারা গেছেন। এখা‌নে আমার দোষ দি‌য়ে লাভ কী?”

নিহত নজরুলের চার কন্যাসন্তান আছে। তার বড় মেয়ে রাজবাড়ী সরকারি কলেজ থেকে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। দ্বিতীয় মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। ছোট দুই মেয়ের বয়স যথাক্রমে ৬ ও ৫ বছর।