জিয়াউল ইসলাম জিয়া : সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. আব্দুস সালামের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও সিভিল সার্জন অফিস ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
সোমবার(৬ অক্টোবর) সকাল ১১টায় সাতক্ষীরা শহরের খুলনা মোড়ে সাতক্ষীরা জেলাবাসীর ব্যানারে আয়োজিত এ মানববন্ধনে সাতক্ষীরা জেলা ভূমিহীন সমিতির সভাপতি কওসার আলীর সভাপতিত্বে ও মফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় অংশ নেন জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতা-কর্মী, শ্রমজীবী মানুষ ও ভুক্তভোগী সাধারণ রোগীরা।
মানববন্ধনে অধ্যাপক ইদ্রিস আলী বলেন, ডা. আব্দুস সালাম উচ্চপদস্থ প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি হয়েও অনৈতিক ও অপেশাদার আচরণে লিপ্ত। তিনি নারী কর্মীদের হয়রানি করেন, নিয়মিত মদ পান করেন, অফিসে মদ্যপ অবস্থায় আসেন এবং সরকারি দায়িত্বকে ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করেন। সাতক্ষীরার মানুষ তার মতো ব্যক্তির অধীনে স্বাস্থ্যসেবা চায় না। সরকারকে অবিলম্বে তার মত মদ্যপ নারীলোভীকে অপসারণ করতে হবে।
সাতক্ষীরা জেলা ভূমীহীন সমিতির সাধারণ সম্পাদক আ্দুস সামাদ বলেন, একজন সিভিল সার্জন যদি নিজের আচরণ দিয়ে পুরো জেলার সুনাম নষ্ট করেন, তাহলে সেটা জেলার মানুষের প্রতি অবমাননা। তিনি অফিসের নারী কর্মীদের তার বাসায় ব্যক্তিগত কাজে বাধ্য করেন- এমন অভিযোগ বহুবার উঠেছে। থানায় অভিযোগও হয়েছে। অনেকে ভয় বা চাকরি হারানোর আশঙ্কায় মুখ খুলতে পারেন না। এটা স্বাস্থ্য সেক্টরের জন্যও লজ্জাজনক।
মহিলা সম্পাদিকা নাজমা আক্তার নদী বলেন, আমরা নারীরা এখন অফিসে নিরাপদ নই। একজন নারী কর্মী যদি সিভিল সার্জনের অনৈতিক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন, তাহলে তাকে অন্য জায়গায় বদলি বা চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেওয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে আমরা কিভাবে কাজ করবো?
অন্যান্য বক্তারা বলেন, যিনি দায়িত্বে থেকে মানুষকে সেবা দেওয়ার কথা, তিনি বরং আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। নারী কর্মীর মেয়ের সাথে যে অনৈতিক কাজ করেছে তা ক্ষমার অযোগ্য। তার বিরুদ্ধে নানান দুর্নীতি, অনৈতিক আচরণ, মদ্যপান ও ক্ষমতার অপব্যবহারেরঅভিযোগ রয়েছে। প্রশাসন নীরব থাকলে এই অন্যায়ের দায় তাদেরও নিতে হবে।
বক্তারা আরো বলেন, ডা. আব্দু সালাম প্রশাসনিক ক্ষমতা ব্যবহার করে সরকারি হাসপাতালগুলোকে ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। তার কর্মকান্ডে অতীষ্ঠ সাধারন কর্মচারীরা। সাতক্ষীরায় আমরা চাই একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক স্বাস্থ্য প্রশাসন। কিন্তু বর্তমান সিভিল সার্জন সেই জায়গা কলঙ্কিত করেছেন। সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. আব্দুস সালামকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে, তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে এবং স্বাস্থ্যখাতকে রাজনৈতিক প্রভাব ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে মুক্ত রাখতে হবে।
মানববন্ধন শেষে অংশগ্রহণকারীরা বিক্ষোভ মিছিল করে সিভিল সার্জন অফিসের সামনে গিয়ে অবস্থান নেয়। এসময় “দুর্নীতিবাজ সিভিল সার্জনের অপসারণ চাই”, “নারী নির্যাতনকারীর বিচার চাই”, “সাতক্ষীরার স্বাস্থ্য প্রশাসন বাঁচাও” ইত্যাদি শ্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে।
পরে সাতক্ষীরার সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শামিনুল হক আন্দোলনকারীদের দাবীর বিষয়ে উপরের মহলের সাথে কথা বলার ব্যাপারে নির্দেশনা দিলে এবং ওসির কথায় আশ্বস্ত হয়ে তারা ঘেরাও কর্মসূচী প্রত্যাহার করেন।
এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন, জেলা ভূমিহীন সমিতির সহ-সভপতি শেখ হাফিজুর রহমান, জেলা শ্রমিক দলের একাংশের আহবায়ক রেজাউল ইসলাম রেজা, নদী, বন ও পরিবেশ রক্ষা কমিটির সাংগঠনিক সম্পদাক ফারুক হোসেন, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের স্বেচ্ছাসেবক শাওন, জেলা তরুণ দলের সাবেক সভপতি আব্দুর রউফ রাজা, জেলা ভূমিহীন সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম রবিউল ইসলাম প্রমূখ।
আপনার মতামত লিখুন :