মিলন হোসেন চীফ রিপোর্টার,
দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থলবন্দরে বেসরকারি আল আরাফাত সিকিউরিটি আউটসোর্সিং জনবল সরবরাহের নামে অর্থ ও ঘুস বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।
এই কোম্পানির দায়িত্বে থাকা ইনচার্জ আমিন শিকদার এই অর্থ বাণিজ্যের হোতা বলে জানা গেছে। বেনাপোল বন্দরে নিরাপত্তায় বেসরকারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আল আরাফাত সিকিউরিটিজের ১৪৩ জন গার্ড কর্মরত আছেন। আর এই প্রতিষ্ঠানের সিকিউরিটি ইনচার্জ আল আমিন শিকদার স্থানীয় সহজ সরল সাধারণ মানুষদের চাকরির নামে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে,বেসরকারি আল আরাফাত সিকিউরিটি ইনচার্জ আমিন শিকদারের মাধ্যমে নিয়োগ বানিজ্য,ছুটি দিয়ে টাকা আত্মসাৎ,বন্দর গেট ও প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল গেট থেকে নগদ অর্থ উত্তোলনের অভিযোগ মিলেছে। পূর্বের বেসরকারি পিমা সিকিউরিটি গার্ডের দায়িত্বে থাকা আল আমিন শিকদার মোটা অংকের টাকা বিনিময় আল আরাফাত সিকিউরিটির ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব নেন। একই সাথে অবৈধ লেনদেন আর অর্থ উত্তোলনের জন্য রেখেছেন পুরাতন সব সুপারভাইজারকে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বেসরকারি আল আরাফাত সিকিউরিটি বেনাপোল বন্দরে নতুন আউটসোর্সিং জনবল নিয়োগ দায়িত্ব পাওয়ার পর আগে যে সমস্ত পিমা সিকিউরিটি গার্ড ছিল তাদের বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে বাদ দেওয়া হচ্ছে। আর নতুন নিয়োগকৃতদের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিচ্ছে। আর এসবের নেতৃত্বে রয়েছে সিকিউরিটি ইনচার্জ আমিন শিকদার। নিয়োগের সময় তাকে শর্তের জালে বেঁধে দেওয়া হচ্ছে অবৈধ লেনদেনে টাকার কথা কাউকে বললে চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হবে।
বন্দর ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বন্দর নিরাপত্তায় বেসরকারি সিকিউরিটির বেতন মাসে ৯ হাজার টাকা। সে হিসাবে দৈনিক ৩০০ টাকা। যদি কেউ ছুটিতে থাকে তাহলে যে কয়দিন ছুটিতে থাকবে সেই কয় দিনের টাকা তাকে দেওয়া হয় না। টাকাটা চলে যায় আল আমিন শিকদার ও সুপারভাইজারদের পকেটে। বেনাপোল বন্দরে মোট গেট আছে ১৭ টি প্রতিটি গেট থেকে গাড়ি প্রবেশ ও বাহিরের ক্ষেত্রে টাকা উঠানো হয়। এই টাকা সপ্তাহে বৃহস্পতিবার ইনচার্জ আমিন শিকদার ভাগাভাগি করে থাকে। এসব অর্থ বাণিজ্যের ফলে ইনচার্জ ও সুপারভাইজাররা হয়ে গেছেন কোটি টাকা মালিক কিনেছেন একাধিক জমি,এফডিআর ও ব্যাংক ব্যালেন্স।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বেনাপোল সাদিপুর প্রাথমিক বিদ্যায়ের পাশে ৩৫ লাখ টাকা দিয়ে জমি কিনেছেন এক সুপারভাইজার। ৯ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করে এত টাকার সম্পত্তি কেনে কি ভাবে। এসব অসাধু ও নিয়োগ বাণিজ্যের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে দূর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করলে বেড়িয়ে পড়বে থলের বিড়াল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন আল আরাফাত সিকিউরিটির সদস্য বলেন, আল আমিন শিকদার ও সুপারভাইজাররা মিলে একটা সিন্ডিকেট তৈরি করে লোক নিয়োগ করে থাকে। যাদের কে নিয়োগ দেওয়া হয় তাদের কাজ থেকে ২০/৩০ হাজার টাকা নেওয়া হয়। পরে এই টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে থাকে। কেউ ছুটি গেলো প্রতিদিন ৩০০ টাকা কেটে নেওয়া হয়।প্রতিদিন প্রায় ১০/১৫ জন ছুটিতে থাকে। তাতে মাসে ছুটির খ্যাত থেকে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা আল আমিন শিকদার ও সুপারভাইজারদের পকেটে চলে যায়।
সে আরও বলেন, সাম্প্রতি তানিয়া নামে এক মেয়েকে ২০ হাজার টাকা চুক্তিতে চাকরি দেওয়া হয়। সে গরীব হওয়ার কারনে অগ্রিম ১০ হাজার টাকা প্রদান করেন। বাকি ১০ হাজার টাকা ৭ দিনের মধ্যে দেওয়ার শর্তে নিয়োগ পান। কিন্তু পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে টাকাটা দিতে না পারায় তাকে চাকরি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। চাকরি থেকে বের করে দিলেও তার ১০ হাজার টাকা তারা ফেরত দেয়নি। তানিয়া একটি এনজিও থেকে সুপারভাইজার আসাদুল এর মাধ্যমে টাকাটা চাকরির জন্য দিয়েছিল।
অনিয়ম ও অর্থ বাণিজ্যের বিষয়ে, বেনাপোল বন্দরের আল আরাফাত সিকিউরিটি গার্ড ইনচার্জ আল আমিন শিকদারকে তার ব্যবহারিত মোঠোফোনে কল দিলে তিনি বলেন গেট থেকে কোন টাকা তোলা হচ্ছে না আর তানিয়ার টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে।
এসব বিষয়ে বন্দরের পরিচালক শামীম হোসেনের কাছে জানতে চাইলে, তিনি বলেন সব কিছু খতিয়ে দেখা হবে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রমাণ মিললে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :